বহু মানুষের মধ্যেই কিন্তু কিডনি স্টোনের সমস্যা লক্ষ্য করা যায় যা একটা সময়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। যদিও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সংখ্যা বেশি। আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো জানেন না যে কিভাবে এই পাথর হয় বা কি ধরনের খাবার খেলে এর হাত থেকে আপনারা কিছুটা হলেও রেহাই পেতে পারেন বা এর ঝুঁকি কমে যেতে পারে? আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে তাই আমরা এই মারণ রোগ সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি! তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক এই প্রতিবেদন।
কিডনিতে পাথর কোথা থেকে আসে?
ক্যালসিয়াম, অক্সালেট এবং ইউরিক অ্যাসিডের মত কিছু পদার্থ আমাদের কিডনিতে স্ফটিক তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ঘনীভূত হয়ে গেলে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়ে যায়।। মোটামুটি ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কিডনিতে পাথর ক্যালসিয়াম দিয়ে তৈরি। বাকি গুলি হল ইউরিক অ্যাসিডের পাথর যা কম প্রস্রাবের পিএইচ স্তরের লোকেদের মধ্যে হয়। কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার পরে এগুলি মুত্রনালীতে প্রস্রাবের প্রবাহকে অবরুদ্ধ করে। এর ফলশ্রুতিতে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং কখনো কখনো প্রস্রাবের রক্ত বা বমি বমি ভাব লক্ষ্য করা যায়। পাথর মুদ্রাশয়ের দিকে মূত্রনালী দিয়ে নিচের দিকে যাওয়ার সময় ঘনঘন প্রস্রাব বা কুঁচকিতে ব্যথা হতে পারে।
তাই আপনি যদি এই উপসর্গ গুলোর মধ্যে কোন একটা অনুভব করছেন তাহলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন এবং কিডনিতে পাথর রয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে একটা রেনাল আল্ট্রা সাউন্ড বা সিটি স্ক্যান করুন।
পাথরের সংখ্যা এবং তাদের আকারের উপর নির্ভর করে পাথরগুলো কেটে যেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস সময় নিতে পারে। ওভার দ্য- কাউন্টার ব্যথার ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন, এসিটামিনোফেন বা নেপ্রোক্সেন আপনাকে অস্বস্তি সহ্য করতে সাহায্য করতে পারে। যদি ব্যথা খুব তীব্র হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সেগুলি পাস করার জন্য ইউরেটেরোস্কোপির সাহায্য নেওয়া হয়। এটি একটি ছোট এন্ডোস্কোপ পদ্ধতি যেটা এনেস্থিসিয়া করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে করা হয়ে থাকে। এতে লেজারের মাধ্যমে পাথরগুলো ভেঙে টুকরো সরানো হয়।
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করার বিশেষ কয়েকটি উপায়:
যদি কিডনিতে পাথর সাধারণ হয় এবং পরবর্তীতে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক উপায়ে সেগুলো প্রতিরোধ করতে হবে।
১) পর্যাপ্ত জল পান করুন:
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার প্রস্রাব তৈরি করে তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেই হিসেবে আপনাকে দৈনিক প্রায় ৮ থেকে ১০ আউন্স বা প্রায় ২ লিটার মোট জল পান করতে হবে।
২) ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণ করুন:
এর ভালো উৎসের মধ্যে রয়েছে দই, মটরশুঁটি,মসুর ডাল এবং বীজ। খাদ্য তালিকা গত ক্যালসিয়াম অন্তরে অক্সালেটকে আবদ্ধ করে এবং কম শোষিত হয় ফলস্বরূপ ঘনত্ব গিয়ে প্রস্রাবে শেষ হয়ে যায়।
৩) লেবু গ্রহণ করুন:
লেবুর মধ্যে সাইট্রেট সাইট্রিক এসিডের একটি লবণ রয়েছে যা ক্যালসিয়ামের সাথে আবদ্ধ হয়ে পাথর গঠনে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন হাফ কাপ লেবুর রস ঘনীভূত করে জলে মিশিয়ে যদি আপনি পান করেন সেক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাইট্রেট বাড়তে পারে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই।
Read More: Weight loss : লেবুর রসের সাহায্যেও নাকি ওজন কমে! সত্যি জানলে চমকে উঠবেন আপনিও
৪) সোডিয়াম:
আপনি একটি উচ্চ সোডিয়াম ডায়েট গ্রহণ করে থাকেন সেক্ষেত্রে কিডনিতে পাথরের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে কারণ এটি আপনার প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। অবশ্যই সোডিয়ামযুক্ত খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েটকে কিডনি স্টোন থেকে বাঁচার জন্য সীমাবদ্ধ রাখুন।
৫) প্রাণীজ প্রোটিন সীমিত করুন:
মাংস ডিম এবং সামুদ্রিক খাবারের মতো অত্যধিক প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই যদি আপনি কিডনির পাথর নিয়ে সমস্যায় ভুগতে না চান সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের মাংস খাওয়ার পরিমাণ অনেকটাই সীমিত করে ফেলুন। দেখবেন ধীরে ধীরে এই পাথরের সমস্যা খুবই দূরে হয়ে গিয়েছে।
Read More: Weight Loss Tips : জল খেলেই কমে যাবে ওজন, শুধু জানতে হবে আসল কায়দা