বলিউড ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় ‘খান সার্কেল’ বলতেই তিন খান অর্থাৎ শাহরুখ খান, সলমান খান এবং আমির খানের নাম সবার প্রথমে আসে। কিন্তু এই তিন জন ছাড়াও চতুর্থ এক অভিনেতা রয়েছেন যাকে কম বেশি আপনারা সকলেই চেনেন। বহু সুপারহিট ছবি দিলেও তার কেরিয়ারের গ্রাফ কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো অবধি খুব বেশি ঊর্ধ্বমুখী হতে পারেনি। আমরা বলছি সইফ আলি খানের কথা। ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার কিছু সময়ের মধ্যেই
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মনসুর আলি খান এবং বলি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের পুত্র সইফ আলি খান ধীরে ধীরে বলিউডে শাহরুখ, সলমন এবং আমিরের পাশাপাশি চতুর্থ খান হিসাবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছিলেন। তবে একটা সময় এসে তার অভিনয় জীবন কিন্তু বেশ খানিকটা নিম্নমুখী হয়েই গিয়েছিল। শুরুর দিকে বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও কোনটাই তার এককভাবে হিট হয়নি অন্যান্য অভিনেতাদের মত।
১৯৯৩ সালের যশ চোপড়া পরিচালিত ‘পরম্পরা’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন সইফ আলী খান। এই ছবিতে অভিনেতার সাথে বেশ কয়েকজন বড় তারকা কে দেখা গিয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছেন
সুনীল দত্ত, বিনোদ খন্না, আমির খান সহ আরো অনেকে। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন স্টার কিড হওয়ার সুবাদে খুব শীঘ্রই সফলতার শিখরে পৌঁছে যাবেন সইফ। কিন্তু তা একেবারেই হয়নি বরং দিন প্রতিদিন তার কেরিয়ার যেন নিচের দিকেই নামছিল।কেরিয়ার শুরু করার প্রথম ১১ বছর হিন্দি ছবিতে টানা অভিনয় করেন সইফ। কিন্তু একটি ছবিতেও একক ভাবে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে। অধিকাংশ ছবিই তারকা সমন্বিত অথবা দ্বিতীয় অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করেন তিনি। এই সময় তারা সুপারহিট ছবিগুলোর মধ্যে যেগুলির নাম উল্লেখ করা যায় তার মধ্যে রয়েছে ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’, ‘কাচ্চে ধাগে’, ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’, ‘ইয়ে দিললাগি’, ‘কয়া কহেনা’র মতো বহু ছবি।
তবে দীর্ঘ সময় এভাবে চলার পর ২০০৪ সালে সইফ আলী খানের অভিনয় জীবনে পরিবর্তন আসে।যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় মুক্তি পায় রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি ‘হম তুম’। এই ছবিতে রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন সইফ। একক ছবি হিসেবে এই প্রথম একটি সুপারহিট চলচ্চিত্র তিনি দর্শকদের উপহার দেন এবং জাতীয় পুরস্কারও পান। তবে দুঃখের ব্যাপার এই যে জাতীয় পুরস্কার পেলেও তাকে সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল এটি নিয়ে। কারণ,সইফ যে সময় ‘হম তুম’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন, সে সময় নাকি ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অভিনেতার মা শর্মিলা ঠাকুর। সুতরাং অনেকেই মনে করেছিলেন নিজের সন্তানকে পুরস্কার পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন শর্মিলা। যদিও অভিনেতার ভক্তদের দাবি এই পুরস্কার প্রাপ্তির সঙ্গে সইফের মায়ের কোন যোগাযোগ নেই। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতেই এই পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি।
২০০৪ সালের পর ‘সালাম নমস্তে’, ‘রেস’, ‘লভ আজ কাল’ এবং ‘ককটেল’ ছবিতে অভিনয় করেন সইফ। এই ছবিগুলিতে সইফের অভিনয় প্রশংসা পায়। তবে ২০১০ সাল নাগাদ আবারও তার অভিনয়ের জীবন ডুবতে বসে।‘হমশকলস’, ‘রঙ্গুন’, ‘ফ্যান্টম’ এবং ‘বাজ়ার’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সইফকে। এই ছবিগুলোর মধ্যে একটাও কিন্তু বক্স অফিসে খুব একটা সাফল্য লাভ করেনি। এরপর ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাল কপ্তান’ এবং ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তনহাজি’ ছবিতে দেখা যায় অভিনেতাকে। দুটি ছবি বক্স অফিসে ভালো সাফল্য করেছিল এবং সইফের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। চলতি বছরে প্রভাস এবং কীর্তি স্যানন এর সঙ্গে আদিপুরুষ ছবিতে দেখা যায় সই ফ আলী খানকে। রাবণের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে বিশাল বাজেট দিয়ে তৈরি এই ছবিটি বক্স অফিসে রীতিমত মুখ থুবড়ে পড়ে ।
ব্যক্তিগত জীবনের দিক থেকে বলতে গেলে প্রথম জীবনে সইফ আলি খান কে করেছিলেন অভিনেত্রী অমৃতা সিংকে। তার থেকে বয়সে অনেক টাই বড় ছিলেন অমৃতা। যদিও পরবর্তীতে সেই সম্পর্কে বিচ্ছেদ আসে।এরপর ২০০৮ সালে ‘তশন’ ছবির সেটে প্রেমে পড়েন সইফ-করিনা। বিয়ে করেন দু’বছর পরে। তাঁদের প্রথম সন্তান তৈমুর পৃথিবীর আলো দেখে ২০১৬ সালে। ২০২১ সালে জন্ম হয় জাহাঙ্গিরের। অন্যদিকে তার প্রথম পক্ষের বিয়ের ভিত্তিতে আরও দুই সন্তান রয়েছে যাদের নাম সারা আলি খান ও ইব্রাহিম খান।