বলিউড থেকে টলিউড এমন অনেক তারকারাই রয়েছেন যারা সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের এক জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। আজ পাঠক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে এমন এক অভিনেতার কথাই আমরা শেয়ার করব যিনি ছোট থেকে অনেক কষ্টে আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন।
কোন রকমের সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মাননি।। বরং মধ্যবিত্ত পারসি পরিবারে জন্ম তার। জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নিজের বাবাকে হারিয়ে ফেলেন। এরপর বহু কষ্ট এবং লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নিজের জীবনে এগিয়েছেন এই অভিনেতা। বলিউড থেকে শুরু করে সম্প্রতি সাউথ এর সিনেমাতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এই তারকা।
অল্প সময়ের ক্যারিয়ারেই শাহরুখ,আমির থেকে সলমান সবার সাথেই কাজ করেছেন তিনি। কি এখনো বুঝতে পারছেন না আমরা কোন অভিনেতার কথা বলছি? আমরা বলছি ‘থ্রি ইডিয়েটস’ খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা বোমান ইরানির কথা।
সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত এই তারকাকে কম বেশি আপনারা সকলেই জানেন।কিছুদিন আগেই বোমান জোশ টকসে জানিয়েছিলেন, ছোট বেলায় তিনি ডিসলেক্সিয়ার শিকার ছিলেন৷ ঠিক মতো কথা বলতে পারতেন না৷
রীতিমতো তোতলাতেন৷ এমনকি এই তোতলামির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে স্কুলেও অসুবিধার মুখোমুখি হতে হতে থাকে। বন্ধুবান্ধবেরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করলে তিনি কষ্ট পেতেন তবুও কখনো পিছিয়ে আসেননি। নিজের এই তোতলামিকে দূর করার জন্য বরং তিনি গানকে ভালো একটি পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
বেশ কিছু সময়ের চেষ্টায় স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে দারুন গান গেয়েছিলেন বোমান। কোনরকম তোতলামি ছাড়াই এই গানটি করেছিলেন তিনি। যার ফলস্বরূপ গোটা স্কুলের হাততালি জুটে ছিল অভিনেতার। সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস আরো বাড়তে শুরু করে তার।
কিন্তু এরপরেই অভাব তার সঙ্গী হতে শুরু করে। কিছুদিন পারিবারিক দোকানে কাজ করেছিলেন তিনি। তবে এরপর আর উপায় না থাকায় তিনি কাজ খুঁজতে তাজ হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেন৷ তাঁর ইচ্ছে ছিল রুফটপ রেস্তোরাঁয় কাজ করা৷
সেই সময় তাঁর সেই কথার উত্তরে ওই ম্যানেজার তাঁকে বলেছিলেন,“উপরে পৌঁছতে হলে নীচ থেকে শুরু করতে হবে”। সেইকারণে ওই ম্যানেজার তাঁকে রুম সার্ভিসের কাজে নিয়োগ করেন। এরপরেই হঠাৎ করে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন।বোমান চাকরি ছেড়ে পারিবারিক দোকান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী ১৪ বছর, বোমান স্ন্যাক্সের দোকান চালিয়েছেন।
এই সময়ের মধ্যে ফটোগ্রাফার হিসেবে ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন তিনি।জানা যায় বোমানের বাবারও ফটোগ্রাফির দারুণ শখ ছিল। তবে ঠিক এই সময়ে আচমকা ঘটে একটি অত্যাশ্চর্য ঘটনা।
বোমানের এক বন্ধু তাকে এক বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশন দিতে বলেন। সকলকে অবাক করে দিয়ে তিনি এই বিজ্ঞাপনের জন্য সিলেক্টও হয়ে যান।এরপর প্রায় ১৮০ টি বিজ্ঞাপন করেছেন বোমান। এই সময় বোমান একটি শর্টফিল্মে অভিনয় করেন৷ সেই শর্টফিল্মই চোখে পড়ে যায় প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়ার৷ ব্যাস তারপর আর বোমান ইরানি কে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
মুন্নাভাই এমবিবিএস-এ প্রফেসর জে. আস্থানার ভূমিকার জন্য তাঁকে কাস্ট করার সিদ্ধান্ত নেন বিধু বিনোদ চোপড়া। এরপর থ্রি ইডিয়টস, মুন্না ভাই ফ্রাঞ্চাইজির দ্বিতীয় ছবি, হ্যাপি নিউ ইয়ার থেকে শুরু করে একাধিক সুপারহিট চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে। বর্তমানে তার সন্তানদের মধ্যে দুই পুত্রই কিন্তু বলিউড ইন্ডাস্ট্রির একটি অংশ।