ছুলি হলো এক ধরনের চর্মরোগ যা কম বেশি অনেকেরই কিন্তু ত্বকে লক্ষ্য করা যায় । এটির ইংরেজি নাম হলো আর্টিকারিয়া।এই শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘আর্টিকা’ থেকে এসেছে যার অর্থ পুড়ে যাওয়া। সাধারণত যখন আমাদের ত্বকের কোন অংশে ছুলি হয় তখন সেই জায়গাটিতে ফ্যাকাসে লাল বা বাদামী রংয়ের ছোট ছোট ফুঁসকুড়ির মতো ছাপ পড়ে। কখনও কখনও ছুলি হলে জ্বালা বা চুলকানির মতো অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই যদি আপনি নিজেদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই কিন্তু এই ছুলির প্রতিকার করতে হবে দ্রুত নয় তো এই সমস্যা কিন্তু বেড়ে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ছুলি দূর করার কিছু সুন্দর ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা সহজেই আপনারা কাজে লাগাতে পারেন। এই দুর্দান্ত টোটকা গুলো নিয়েই আজকের প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব।
6লেবুর রস ব্যবহার করুন:
ছুলির সমস্যায় আপনারা কিন্তু লেবুর রস কাজে লাগাতে পারেন। দিনে অন্ততপক্ষে দুইবার লেবুর রস নিংড়ে আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে ভাল করে মালিশ করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত এটাকে লাগিয়ে রেখে দেবেন এবং তারপর অল্প গরম জল দিয়ে এটাকে আলতো করে ধুয়ে দেবেন। দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যেই ছুলির সমস্যায় অনেকটাই উপকার পাবেন আপনারা।
আরও পড়ুন- Breast cancer: ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার, কী লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে? কীভাবে সাবধান হবেন
5লেবু এবং চিনির মিশ্রিত স্ক্রাব ব্যবহার করুন:
অবশ্যই আপনারা কিন্তু এই টোটকাটি ট্রাই করতে পারেন যদি ছুলির সমস্যা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে থাকে।একটি লেবু মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশের উপর আধা চামচ চিনি ছিটিয়ে নিন। তার পর এটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে আলতো করে মালিশ করতে থাকুন। আগের প্রক্রিয়ার মতই কিছুক্ষণ বাদে এটা কেউ পরিষ্কার জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। অন্ততপক্ষে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন যদি আপনারা এই উপায়টি কাজে লাগান তাহলে কিন্তু খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
4পেঁয়াজ ব্যবহার করুন:
যদি আপনারা একেবারে অল্প সময়ের মধ্যে ছুলি নিরাময় করতে চান তাহলে কিন্তু নিশ্চিন্তে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারেন। পেঁয়াজের মধ্যে এক্সফোলিয়েট উপাদান রয়েছে যা ছুলি দূর করতে সাহায্য করে।একটি বড় মাপের পেঁয়াজ মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশটি নিয়ে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে দিনে অন্তত ২ বার মালিশ করুন। কয়েকদিন ব্যবহার করার পরেই কিন্তু আপনারা দেখবেন ছুলির দাগ ধীরে ধীরে হালকা হতে শুরু করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- Beauty Tips : জেনে নিন ত্বকের ফাটা দাগ দূর করার দুর্দান্ত কিছু উপায়, রইল বিস্তারিত ঘরোয়া টোটকা
3টমেটো রসের ব্যবহার:
প্রাকৃতিক উপায়ে ছুলি দূর করার জন্য এটিও একটা দারুন কার্যকরী উপাদান হিসেবে পরিচিত।একটি বড় ও পাকা টমেটো নিয়ে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তার পর টমেটোটিকে ভাল করে চটকে নিয়ে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগান। আঙ্গুল দিয়ে আলতো ভাবে কিছু ক্ষণ মালিশ করুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে তারপর জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। তবে এই টোটকা ক্ষেত্রে কিন্তু আপনাদের একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে টমেটোর এই রস লাগানোর পরে অন্তত বেশ কিছু ঘন্টা আপনারা আর মুখে কোন রকমের সাবান ব্যবহার করবেন না। তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।
2টক দইয়ের প্রলেপ:
আমাদের ত্বকের জন্য টক দই কিন্তু খুবই কার্যকরী এবং দারুন একটা উপকরণ।টক দইয়ের ল্যাক্টিক অ্যাসিড ছুলি দূর করতে খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। টাইরোসিনেজ নামের এনজাইম শরীরের মেলানিন ও অন্যান্য রঞ্জকের উপস্থিতির জন্য দায়ি। ল্যাক্টিক অ্যাসিড টাইরোসিনেজ এনজাইমের অতিরিক্ত উৎপাদনকে বাধা প্রদান করে। ফলে ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ৩ চামচ টক দই নিয়ে একটি কটন বলের সাহায্যে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগান। কিছুক্ষণ সময় বাদে পরিষ্কার উষ্ণ জল দিয়ে এটাকে ধুয়ে ভালো করে জায়গাটি মুছে নিন।
1ভেজিটেবল মাস্ক ব্যবহার করুন:
ভেজিটেবল মাস্ক তৈরি করার জন্য ২ টুকরো শশা ও ২ টুকরো স্ট্রবেরি নিয়ে একসঙ্গে ভাল করে চটকে নিন। এ বার এর সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ছুলির উপরে লাগিয়ে স্বাভাবিক ভাবে শুকিয়ে নিন। শুকিয়ে নেওয়া হয়ে গেল একটু পরিষ্কার ঠান্ডা জল দিয়ে ভালোভাবে জায়গাটা ধুয়ে নিলেই কিন্তু কাজ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ছুলি প্রসঙ্গে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর বলছেন,“ছুলি কিন্তু ছোঁয়াচে। একজনের ব্যবহার করা জিনিস থেকে আর-একজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক সম্ভাবনা রয়েছে। বাচ্চার মুখে, গালে ছুলি হলে তার গাল-মুখ ধরে আদর করলে সেখান থেকেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়ার সাত দিনের মধ্যেই চর্মরোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তখন আর তা সংক্রামক হয় না। একবার হলে ছুলি প্রতিবছর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ঠিক যেমনটি অন্যান্য ছত্রাক জাতীয় অসুখে দেখা দেয়”। তাই যতটা সম্ভব শরীরে ঘাম বসতে দেবেন না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তাকে নিয়মিত পরিষ্কার করে স্নান করাবেন।